নিজস্ব প্রতিবেদকঃ ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র মোঃ আতিকুল ইসলাম পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই হঠাৎ কর্পোরেশন কর্মকর্তাদের নিয়ে শহর পরিদর্শনে বেরিয়ে পড়েন। এ সময় ডিএনসিসির বিভিন্ন স্থানে অনিয়ম দেখে ক্ষুব্ধ হয়ে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেন তিনি।
রবিবার (৩০ আগস্ট) সকাল পৌনে সাতটায় ডিএনসিসির বিভাগীয় কর্মকর্তাদের নিয়ে উত্তরা ৪ নম্বর সেক্টর থেকে শুরু করে মিরপুর, গুলশান, বনানীসহ বিভিন্ন স্থানের পরিচ্ছন্নতা, মশক নিধন, সড়ক মেরামত, চলমান উন্নয়নমূলক কাজ, অবৈধ ফুটপাত দখল, অবৈধ বিজ্ঞাপনী সাইনবোর্ড, বিলবোর্ড ইত্যাদি সরেজমিনে পরিদর্শনের উদ্দেশ্যে বের হন তিনি।
সকাল সাড়ে সাতটায় মেয়র উত্তরা ১১ নম্বর সেক্টরে যান। সেখানে একটি বাড়ির সামনে অবৈধভাবে ফুটপাত দখল করে নির্মাণ সামগ্রী রাখায় মোঃ আতিকুল ইসলাম ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি তাৎক্ষণিকভাবে বাড়ির মালিকের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন। এরপর উত্তরা পশ্চিম থানার সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় থানার পাশে ডাম্পিং করে রাখা গাড়িতে পানি জমে এডিস মশার লার্ভা হয়েছে কিনা তা পরীক্ষা করেন। থানার দায়িত্বরত কর্মকর্তাদেরকে তিনি এ বিষয়ে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেন।
এরপর মেয়র উত্তরায় খিজির খাল পরিদর্শন শেষে সকাল ৮টায় মিরপুরের কালশী খাল এবং আশেপাশের এলাকা পরিদর্শন করেন। কালশী এলাকার গলিতে রাস্তা ও ফুটপাত দখল করে দোকান বসানোর কারণে তিনি ক্ষুব্ধ হন এবং তাৎক্ষণিক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন।
এ সময় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আজকের পর থেকে পরিদর্শনে বের হলে সঙ্গে ম্যাজিস্ট্রেট, ট্রাক, লোডার, বুল্ডোজার থাকবে। সড়ক ও ফুটপাতের ওপর অবৈধ নির্মাণ দোকান বা অন্য কিছু পেলে সেগুলো সঙ্গে সঙ্গে নিলামে বিক্রি করা হবে। আগামি ৭ সেপ্টেম্বর থেকে আমরা এ অভিযান শুরু করবো।
সাংবাদিকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনারা দেখেছেন সুন্দর ফুটপাতের ওপর নির্মাণসামগ্রী রেখে তা নষ্ট করছে। এই শহরে এগুলো বরদাস্ত করা হবে না। ১ অক্টোবর থেকে আমরা ঝুলন্ত তারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। আগামী ১ সেপ্টেম্বর থেকে রাজস্বের আওতা বাড়ানোর জন্য চিরুণী অভিযান শুরু হবে। যারা ট্যাক্সের আওতায় আসেনি, তাদেরকে ট্যাক্সের আওতায় আনার ব্যবস্থা নিব। আমরা আজ শুরু করলাম, এটি চলবে।
মেয়র মোঃ আতিকুল ইসলাম মিরপুরের কিছু রাস্তার উন্নয়নকাজ দ্রুত শেষ করার নির্দেশ দেন। মিরপুর থেকে মগবাজার যাওয়ার পথে কচুক্ষেতে রাস্তার ওপর ময়লার ভাগাড় দেখে প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তাকে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন। মগবাজার রেল ক্রসিংয়ের কাছে প্রধান সড়কে ফ্লাইওভারের নিচে রাখা ময়লার কন্টেইনারগুলো সরিয়ে নেওয়ারও নির্দেশ দেন। সেখানে একটি সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশন (এসটিএস) নির্মাণ করার জন্য রাজউক ও হাতিরঝিল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করবেন বলে জানান তিনি।
জলাবদ্ধতা নিরসন প্রসঙ্গে মেয়র বলেন, কালশীতে একসময় অনেক জলাবদ্ধতা ছিল। এখন আর সেরকম নেই। একইভাবে বনানী এয়ারপোর্ট রোডের জলাবদ্ধতাও নিরসন করা হয়েছে। আশকোনায় নতুন খাল খনন করা হয়েছে। মেট্রোরেল প্রজেক্টের কারণে সৃষ্ট জলাবদ্ধতা নিরসনেরও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
এরপর গুলশান-১ ও গুলশান-২ এর মাঝে স্ট্যান্ডার্ড চাটার্ড ব্যাংকের সামনে ফুটপাত দখল করে রাখা নির্মাণসামগ্রী দেখে গাড়ি থামিয়ে নেমে পড়েন মেয়র। এভাবে ফুটপাত দখল করে বালু রাখায় ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে ভৎর্সনা করেন মেয়র। কাউকে না পাওয়ায় বালু জব্দ করা হয়। একইসঙ্গে স্ট্যান্ডার্ড চাটার্ড ব্যাংকের সকল অবৈধ বিজ্ঞাপনী বিলবোর্ড অপসারণ করার নির্দেশ দেন।
এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ডিএনসিসির সচিব রবীন্দ্রশ্রী বড়ুয়া, প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা কমডোর সাইদুর রহমান, প্রধান প্রকৌশলী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আমিরুল ইসলাম, প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোমিনুর রহমান মামুন, প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা আবদুল হামিদ মিয়া ও প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা মোজাম্মেল হক।